জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় ভবিতব্য বিজ্ঞানীদের সুচিন্তার সম্মেলন

  • Author(s): শাহীনুর ইসলাম
publications

Print Friendly, PDF & Email

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের প্রাণি বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। জলবায়ুর সঙ্গে দেশের কৃষিক্ষেত্র ও কৃষিনির্ভর মানুষ ক্ষতির শিকার। প্রকৃতি ও প্রাণি বৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় মানুষ এবং পরিবেশে ভারসাম্য হারিয়েছে ফেলছে।

তাই আগামীদিনে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন বিজ্ঞানীর খোঁজ করছে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ‘ক্লাইমেট এক্সিবিশন ২০২২’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় ৩৬০ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধারণাপত্র জমা দিলে তাদের মধ্যে চূড়ান্ত ৯০ জন অংশ নেন।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২ উপলক্ষে, বাংলাদেশে খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট (সিসিডিবি) এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের গ্রীন প্ল্যানেট ক্লাব বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) যৌথভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

বসুন্ধরার আবাসিক এলাকায় ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি মাল্টিপারপাস হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা উপস্থাপন করেন। পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজন প্রক্রিয়ার সঙ্গে খাপখাওয়া ৯০ টি পোস্টার এবং প্রোটোটাইপ সেখানে প্রদর্শিত হয়।

সকালে আইইউবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান, সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক মিস জুলিয়েট কেয়া মালাকার ও প্রফেসর মো. আবদুল খালেক অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিসিডিবি ক্লাইমেট চেইঞ্জ প্রোগ্রাম হেড ফয়েজুল্লাহ তালুকদার, রেজিলিয়েন্স বিল্ডিং কো-অর্ডিনেটর পলাশ সরকার, টেকনোলজি পার্ক কো-অর্ডিনেটর আশরাফুজ্জামান খানসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তারা।

ক্লাইমেট এক্সিবিশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ৯০ টি পোস্টার ও প্রোটোটাইপ বা সুচিন্তার মডেলগুলো প্রাণি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অনেক সহায়ক হবে। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের প্রাণি বৈচিত্রের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখাবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানান অংশ নেয়া বিজ্ঞানীরা।

আইইউবির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রতীম দাশ বলেন, এই পদ্ধতি (Desert Greening) বনায়ন, কৃষিক্ষেত্র এবং ছাদকৃষিতে বেশ ভুমিকা রাখবে। বছরের সাত মাস এই পদ্ধতিতে একটি গাছে পানি দিতে হবে না; প্রতিদিন গাছভেদে অন্তত এক লিটার পানি গাছ নিজেই গ্রহণ করবে। পরিত্যক্ত টায়ারের ভেতরের টিউবে সংরক্ষিত ১৫ লিটার পানি রশি পদ্ধতিতে গ্রহণ করবে গাছ।

এই বিজ্ঞানী বলেন, এই পদ্ধতি রাজধানীর আইল্যান্ডে থাকা পানির অভাবে মৃতপ্রায় গাছগুলোকে বাঁচাতে পারে। এখানে অতিরিক্ত জনবল এবং যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হবে না। বরং শহরের জঞ্জাল হিসেবে থাকা পুরনো ফেলে দেয়া টায়ারগুলো ইকো পদ্ধতিতে কাজে লাগানো যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রভা ‘EVALUATING EFFICACY OF DIFFERENT DESALINATION PLANTS: IN CONTEXT OF COASTAL BANGLADESH’ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তুলে ধরেন। প্রভা বলেন, দীর্ঘমেয়াদের জন্য হাইব্রিড পদ্ধতির দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিদেশি একটি কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপনন করছে। ব্যয়বহুল হলেও বিদ্যুৎ নিরাপত্তায় সূর্যশক্তিকে কাজে লাগানোর তাগিদ দেন এই বিজ্ঞানী।

কৃষিক্ষেত্রে ধানের জামিতে পানির ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নিঃসরণের বিশেষ মডেল তুলে ধরেন আইইউবির এই শিক্ষার্থী।কৃষি, স্বাস্থ্য, নগরায়ন, কার্বন নির্গমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে মডেল তুলে ধরেন এই বিজ্ঞানীরা।

ক্লাইমেট এক্সিবিশনে অংশ নিয়ে বিজয়ী ভবিতব্য বিজ্ঞানীদেরকে প্রাইজমানি হিসেবে ১ লাখ টাকা করে দেয়া হবে জানান বাংলাদেশে খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট (সিসিডিবি) কো-অডিনেটর মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান তারেক।

তিনি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় তরুণ বিজ্ঞানীদের এমন উদ্ভাবিত প্রজেক্টগুলো মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। যেগুলো ভালো ফল দেবে সেগুলো বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব সিসিডিবি নিয়েছে।

তবে এমন এক্সিবিশনে নতুন বিজ্ঞানীদের আরো সম্পৃক্ততা দরকার বলে জানান জলবায়ু বিজ্ঞানী মাহমুদুল হাসান তারেক।

সিসিডিবি নিজস্ব অর্থায়নে গাজীপুরে এশিয়ার শীর্ষ ‘ক্লাইমেট টেকনোলজি পার্ক’ স্থাপন করেছে। দীর্ঘসময় নির্মাণ শেষে চলতি বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এই পার্কে বিজয়ী বিজ্ঞানীদের পোস্টার এবং প্রোটোটাইপগুলি প্রদর্শিত হবে করবে সিসিডিবি কতৃৃপক্ষ।

তবে উদ্বোধন শেষে ‘ক্লাইমেট টেকনোলজি পার্ক’ ১ অক্টোবর থেকে সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ‘মিড ইয়ার ট্রেন্ড রিপোর্ট’ নামে প্রতিবেদনে গত বছরের ২১ নভেম্বরে প্রকাশ করে, সহিংসতা, অনিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে।

গত ডিসেম্বরে বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ২৪ লাখ। পরবর্তী ৬ মাসে এ সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। তবে বাংলাদেশে প্রতি বছরের ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, ‘ক্লাইমেট এক্সিবিশনে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬০ জন শিক্ষার্থী ধারণাপত্র জমা দেন এবং তার মধ্যে বাছাইয়ে চূড়ান্তভাবে ৯০ জন ভবিতব্য তরুণ বিজ্ঞানী অংশ নেয়। চলতি মাসের ৩০ জুলাই বিজয়ীদের ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মাল্টিপারপাস হলে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

Was this post helpful?