লাগামহীন বাণিজ্যিক নলকূপ, পানি বিপর্যয়ে বরেন্দ্র জনপদ
- Author(s): এম আর রকি
কোনো ধরনের জরিপ না করেই বাণিজ্যিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের প্রতিযোগিতা চলছে নওগাঁর বরেন্দ্র মাঠগুলোতে। এতে ভূঅভ্যন্তর থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে দ্রুত নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলায় বরেন্দ্র জনপদে গত এক দশকে অন্তত ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। পরিবেশবিদরা বলছেন, লাগামহীনভাবে পানি তোলা বন্ধ না হলে সামনের দিনগুলোতে দেখা দেবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
লাগামহীনভাবে পানি তোলা বন্ধ না হলে সামনের দিনগুলোতে দেখা দেবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
এম আর রকি
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জমি চাষাবাদ শুরু হয় নওগাঁর বরেন্দ্র জনপদে। গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে এ সময় শুরু হয় মাটির তলদেশ থেকে পানি তোলা। জমি সেচের নামে বাণিজ্যিকভাবে মাঠে দেয়া হয় অগভীর নলকূপের সংযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নীতিমালার তোয়াক্কা না করে গভীর নলকূপের পাশেই বসানো হয়েছে একাধিক সেচ-মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে ভূঅভ্যন্তর থেকে দিনরাত পানি তোলার কাজে চলছে অসম প্রতিযোগিতা।
প্রতি মৌসুমে ভূগর্ভের পানি কি পরিমাণ ব্যবহার করা হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে মৌসুম এলে নতুন নতুন গভীর এবং অগভীর নলকূপ স্থাপন করার ফলে মাত্রাতিরিক্ত পানির ব্যবহার বেড়ে যায়, ফলে বরেন্দ্র জনপদে সুদূর প্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা বলছেন পরিবেশবিদরা।
অপরিকল্পিত পানি ব্যবহারে নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় প্রতি বছর আনুপাতিক হারে ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়ার সমীক্ষা তুলে ধরা হয় এক কর্মশালায়। জানানো হয় আগামী দিনের উদ্বেগের কথা।
নওগাঁ সরকারি কলেজ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমদের আগামী দিনের জন্য এখনই চিন্তা করে এগুনো দরকার।’
নওগাঁ জনস্বাস্থ্য অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশল মো. মাহমুদুল আলম শাহীন বলেন, ‘প্রতি বছর পানির স্তর নেমে যাচ্ছে শুধু অপরিকল্পিতভাবে পানি ব্যবহারে। অনিয়ন্ত্রিত সেচ পাম্প বসানোর কারণে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ সময়ে বরেন্দ্র এলাকায় দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট।’
সেচ বাণিজ্যের নামে একাধিক নলকূপ স্থাপনের অসাধু এ কারবার বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীরা বরেন্দ্রের ও বিদ্যুৎ বিভাগের সেচ বাণিজ্য বন্ধ চান। তারা বলেন, কিছু টাকা নিয়ে যেখানে সেখানে সেচ পাম্প বসানোর ফলে মৌসুমের আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে এলাকার ডোবানালা। পরে টিউবওয়েল বসিয়ে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১২ সাল থেকে গভীর নলকূপ স্থাপন বন্ধ থাকায় অগভীর নলকূপ স্থাপনের প্রবণতা বেড়েছে। নিয়ম-নীতি না মানলে আগামীতে এ অঞ্চলে পানির সংকট প্রকট হবে বলে মনে করছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্বাহী প্রকৌশল মো. মতিউর রহমান।
জেলায় প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৪০ হাজার ৫০টি গভীর নলকূপ এবং পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৬৫ হাজার অগভীর নলকূপ দিয়ে তোলা হচ্ছে পানি।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূগর্ভের পানি জরিপে গত ৪ বছরে বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর নেমে যাওয়ার গড় চিত্র:
ডিসেম্বর ২০২০ পানির স্তর ছিল ৪৮.২ ইঞ্চি
ডিসেম্বর ২০২১ পানি স্তর ছিল ৫০.৮ ইঞ্চি
ডিসেম্বর ২০২২ পানি স্তর ৫৩.৫ ইঞ্চি
ডিসেম্বর ২০২৩ পানি স্তর ৫৯.৪ ইঞ্চি
- Source Website: https://www.somoynews.tv/news/2024-02-29/H58M6zB1?fbclid=IwAR1jsOzsYtETB0GCLJXQ7qT5thjnA_QmN-dTQrbhEn4UevgdNvjIsDWGgxg
Was this post helpful?
Let us know if you liked the post. That’s the only way we can improve.