শ্যামনগরের বনবিবিতলা হয়ে উঠেছে কৃষিগ্রাম

  • Author(s): বিলাল হোসেন, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)
Print Friendly, PDF & Email

উপকূলের লবণাক্ততা মোকাবিলা

বিলাল হোসেন, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

নব্বই দশকে যেখানে আবাদ হতো ধানসহ বিভিন্ন শাক-সবজি, সেখানে ২০০৭ সালের পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে অধিকাংশ কৃষক শুরু করেন লবণ পানির মাছ চাষ। আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে এ লবণাক্ততাকে জয় করে পুনরায় সেই হারিয়ে যাওয়া কৃষি সম্পদকে ফিরিয়ে এনেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বনবিবিতলার কিষান-কৃষানিরা, যা এখন ‘কৃষিগ্রাম’ নামেই পরিচিত।

বনবিবিতলার উৎপাদিত সবজি, মাছ-মাংস, ধান-গম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। এক সময় এ গ্রামে হাতেগোনা কয়েক জন কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে ৭০% পরিবারই কৃষির সঙ্গে যুক্ত। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ গ্রামের ২১৫ হেক্টর জমির মধ্যে নব্বই দশকে কৃষিতে ব্যবহার হতো ১৯০ হেক্টর, যা আইলার পর ৫০ হেক্টরে নেমে আসে। লবণাক্তের কারণে বাকি জমিতে লবণ পানির মাছ চাষ হতো। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদের ফলে ২০১৭ সালের পরে থেকে এ গ্রামের কৃষি চাষে জমির পরিমাণ বেড়ে ১৫০ হেক্টর হয়েছে। পাশাপাশি ৪০ হেক্টরে চাষ হয় মিঠা পানির মাছ।

কৃষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, আইলার পর লবণের কারণে অনেকেই কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আমি কোনোভাবে টিকিয়ে রেখেছিলাম। ৫ বছর আগে যে জমিতে ১ মণ সবজি হতো, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই জমিতে ২ মণের অধিক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি আমাদের প্রতি মাসে প্রশিক্ষণ ও উন্নতমানের সার-বীজ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। অধিক ফলন উৎপাদনের কারণে এখন সবাই কৃষিতে ঝুঁকছেন।

সৌমিত্রা মণ্ডল জানান, ৫/৬ বছর আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে খুব ভাল ফসল হচ্ছে। এখানে মিঠা পানির খুবই সংকট। পানির ব্যবস্থা করা গেলে আরও ভালো ফসল উৎপাদন হতো। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মহাতাব সরদার বলেন, বনবিবিতলার অধিকাংশ পরিবারই কৃষির সঙ্গে জড়িত। এটি এখন কৃষিগ্রাম নামে পরিচিত হয়ে গেছে।

সিসিডিবির সুজন বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল ধান ও সবজি বীজ প্রদানসহ টাওয়ার, বস্তা, মালচিং পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় সবজি আবাদে সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সুপেয় পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংকি, সেচের জন্য মিঠা পানি সংরক্ষণে ছোট ছোট পুকুর খনন করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কৃষিতে ঝুঁকছেন এখানকার মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, বনবিবিতলার কৃষকরা লবণাক্ততা মোকাবিলা করে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকি। বনবিবিতলা এখন কৃষিগ্রাম নামে পরিচিত।

Was this post helpful?